• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

বৃষ্টি দোলা আবৃত্তি পদক ও বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি সম্মননা স্মারক পেলেন সৈয়দ সাইমূম আনজুম ইভান

ভয়েস অফ বাংলাদেশ
প্রকাশিত February 3, 2022
বৃষ্টি দোলা আবৃত্তি পদক ও বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি সম্মননা স্মারক পেলেন সৈয়দ সাইমূম আনজুম ইভান
বিশেষ প্রতিনিধি:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব’ শেষ হয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে পদক প্রদান পর্বে বৃষ্টি দোলা সেরা তরুন আবৃত্তি শিল্পী ২০২০ পদক লাভ করেছেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেটের জনপ্রিয় আবৃত্তি সংগঠন মৃত্তিকায় মহাকালের মূখ্য নির্বাহী নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী ও প্রশিক্ষক সৈয়দ সাইমূম আনজুম ইভান। এসময় তার হাতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি সম্মাননা স্মারকও তুলে দেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্ব্য পরিষদের সভাপতি সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এম পি।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য ছাড়াও ছিলো পদক ও স্মারক প্রদান, আবৃত্তি প্রযোজনা ও একক পরিবেশনা।

এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নসরুল হামিদ ফাউন্ডেশনের পরিচালক সীমা হামিদ, আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা ও শারমিন লাকীসহ অনেকে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘যারা হৃদয় থেকে কবিতার শব্দ উচ্চারণ করেন, তারা কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে পারেন না। কবিতার সাহায্যে আমরা সমাজের সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস পায়।’

বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি আবৃত্তির জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আসাদু্জ্জামান নূরের নেতৃত্বে সম্মিলিত আবৃত্তি, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হাসান আরিফের নির্দেশনায় আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ ও ৫০ গুণী শিল্পীর আবৃত্তি মঞ্চায়িত হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি সম্মাননা স্মারক এবং উৎসব স্মারক প্রদান হয়।

উল্লেখ্য গত ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সারা দেশের আবৃত্তি সংগঠনগুলোর ফেডারেশন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসবের’ উদ্বোধন করেন।

করোনাকালে সবই যখন স্থির স্থবির তখন ৬৪ জেলায় সরব হলেন বাচিক শিল্পীরা। চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু করলেন আবৃত্তির মহোৎসব। আয়োজনটির আনুষ্ঠানিক শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব।’ একই উৎসব থেকে দেয়া হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদকও। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের নতুন উদ্যোগ। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া উৎসব শেষ হয় সোমবার ।

শুরুর মতো সমাপনী দিনেও উৎসবে মুখর ছিল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি। মঞ্চ আলোকিত করে রেখেছিলেন খ্যাতিমান আবৃত্তি শিল্পীরা। দর্শক সারিতে বসে অগ্রজদের আবৃত্তি উপভোগ করেছেন অপেক্ষাকৃত নবীনরা। এর বাইরে দেখা সাক্ষাত, ছবি তোলা, হৈ হুল্লোড় তো ছিলই। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সম্মেলক আবৃত্তিতে অংশ নেন কয়েক প্রজন্মের প্রতিনিধি। এ দলে আশরাফুল আলম, আসাদুজ্জামান নূর যেমন ছিলেন, তেমমনি ছিলেন শিমুল মুস্তাফা বা আহ্কাম উল্লাহও। প্রায় ১৭ জন এক মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করেন। তাদের কণ্ঠে প্রার্থনা হিসেবে ছিল রবীন্দ্রনাথের পঙ্ক্তি, যেখানে বলা হচ্ছিল ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো,/নির্ভয় করো হে।/মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে।/অন্তর মম বিকশিত করো,/অন্তরতর হে।’ পাশাপাশি নজরুল ও জীবননান্দ দাশের কবিতা থেকে শপথ এবং অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করা হয়। এছাড়াও সমাপনী দিনে বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি সম্মাননা স্মারক ও উৎসব স্মারক প্রদান করা হয়।

এবার পুরো উৎসবের অর্জন অনেক। অর্জন যেমন অনেক, তেমনি উজ্জীবনটাও লক্ষ্য করার মতো। করোনা সংক্রমণের মধ্যেই উৎসবের প্রতিটি দিন আবৃত্তি শিল্পীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। সারাদেশ থেকে প্রায় ৩৭০টি সংগঠন এতে অংশ নেয়। শিল্পী সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এ তো কম বড় কথা নয়। ঢাকার শিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আবৃত্তি করেন। বাকিরা উৎসবে মাতেন যার যার জেলায়।

উৎসবের অন্যতম প্রধান প্রাপ্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ উৎসব উদ্বোধন করেন তিনি। শুধু আবৃত্তির আয়োজনে দেশের সরকার প্রধানের এমন অংশগ্রহণ খুব সম্ভবত এটিই প্রথম। সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার ইতিহাসে নিশ্চয়ই মাইল ফলক হয়ে থাকবে এই ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে সরাকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আবৃত্তি শিল্পটি বড় ধরনের স্বীকৃতি পেল। শক্তি তো পেলই। পাশাপাশি সব কটি জেলার জেলা প্রশাসক উদ্বোধনী আয়োজনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছিলেন। কবিতার সঙ্গে প্রশাসনের এমন সম্পৃক্ততাও আগে কখনও ঘটেছে বলে শোনা যায় না। এর আগে প্রথম দিনের আয়োজনে আবৃত্তি প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে ছিল শিশুরাও। ওইদিন শিশু শিল্পীদের অংশগ্রহণে শিল্পকলার মঞ্চে পরিবেশিত হয় আবৃত্তি প্রযোজনা ‘স্বাধীনতার অমর কাব্য।’

এ বছর উৎসবটির সূচনা হলো। প্রতি বছর একই নিয়মে উৎসব আয়োজন করা হবে। প্রদান করা হবে পদকও। সরকার এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তবে আবৃত্তির বিদগ্ধ জনদের নিয়ে গঠিত জুরিবোর্ড পদকের জন্য যোগ্যদের খুঁজে নেবে। অর্থাৎ এখানেও কিছুটা নতুন। সরকার ও আবৃত্তি শিল্পীদের মধ্যে একটা সমন্বয় ঘটানো হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যুক্ত হওয়ায় উৎসব ও পদকটি বিশিষ্টার্থক হয়ে উঠেছে। নামের মধ্য দিয়ে উৎসবের চরিত্রটিও স্পষ্ট। এ উৎসব থেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকেই তুলে ধরা হবে। উদার ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিবাদী চিন্তার প্রসারে ভূমিকা রাখবে উৎসব।