• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

এফডিসিতে সিনেমার কোনো খোঁজ নেই, চলছে পরস্পরবিরোধী আন্দোলনের মঞ্চায়ন

ভয়েস অফ বাংলাদেশ
প্রকাশিত February 1, 2022
এফডিসিতে সিনেমার কোনো খোঁজ নেই, চলছে পরস্পরবিরোধী আন্দোলনের মঞ্চায়ন

বিনোদন ডেস্কঃ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তাতে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। মাত্র সাড়ে চারশ ভোটারের এই নির্বাচনে সারাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অবাক কৌতুহল তৈরি হয়েছে, তা একই সাথে আনন্দের ও হতাশার। কারণ সকলেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা আর উন্মাদনার ভেতরে ছিলেন। তাতে অনেকে ভেবেছিলেন যে, ফলাফল ঘোষণার পর নতুন নেতৃত্বে, নতুন উন্মাদনায় চলচ্চিত্র শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন সকলে মিলে।

কিন্তু পরাজয় মেনে না নিয়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন নিপুন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী জায়েদ খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেন।

অভিনেত্রী নিপুন বলেন, ‘এই অন্যায়ের শেষ দেখে ছাড়বো। চলচ্চিত্রের স্বার্থে আমি এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমরা সাধারণ সম্পাদক পদে পূন নির্বাচন চাইছি।’

অন্যদিকে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চনের বিজয়ের পর পরাজয় মেনে নিয়ে নব নির্বাচিত পরিষদকে ফেসবুকে প্রথম শুভেচ্ছা জানান মিশা সওদাগর।

মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমাদের ভেতরে সম্প্রীতির উদাহরণ না তৈরি করতে পারলে তো সমাজ হেরে যাবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন আমাদের দুই পক্ষের ভেতরে এত এত খুনসুটি আর হাসি ঠাট্টা দেখে সত্যিই মনটা ভরে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম জিতি বা হারি, সবাই একসাথে কাজ করবো। আর ইলিয়াস কাঞ্চন হলেন আমাদের মাথার ছায়া। তাকে আমরাও সভাপতি চেয়েছিলাম। তিনি আমাদের প্যানেল থেকে করলেও আমি সরে যাবার জন্য প্রস্ত্তত ছিলাম। আর শিল্পী সমিতি তো এত বড় কোনো সংগঠন নয়, যে রাতারাতি এটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দিতে পারবে। এই সংগঠনের একমাত্র কাজ হলো একসাথে থাকা, সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্হানে থেকে কাজ করে যাওয়া। সেটাই করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু নির্বাচনের পরে যেভাবে সকলে অভিযোগ জানিয়েছে তাতে সত্যিই হতবাক ও মর্মাহত এবং বিব্রত। সবাইকে এক টেবিলে বসে সমাধান প্রয়োজন। জানিনা কিভাবে সেটি সম্ভব?’

এদিকে নির্বাচনের ফলাফলের পরদিন সকালে নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন তার সকল ভোটার শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সাথে প্রাক্তন সভাপতি মিশা সওদাগরকে নতুন কমিটির উপদেষ্টা প্যানেলে থাকার প্রস্তাবও দেন। বিকেলে কাঞ্চন নিপুন প্যানেলের সাথে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনার কিছু অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন।’

এদিকে নির্বাচনের দিনে ১৮ সংগঠনের সদস্যদের কাউকেই ঢুকতে না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ক্ষোভের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এফডিসির ব্যবস্হাপনা সম্পাদকের পদত্যাগের দাবী জানান। শুধু তাই নয়, এফডিসির এমডির কুশপুত্তলিকা দাহ করেন পরিচালক প্রযোজক সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই নতুন ডামাডোল আর অস্হিরতা কখন কিভাবে থামবে তা কেউই জানেন না। অনেকেই বলছেন জায়েদ খানের অপসারণ হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।

এ ব্যাপারে জায়েদ খান বলেন, ‘আমাকে নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই তথ্য সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। এখনও থামেনি। আমি গত ৪ বছর কাজ করেছি বলেই সকলে আমাকে ঈর্ষা করে। আমি তাই ডিজিটাল এক্ট এ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অন্যদিকে নিপুনও নির্বাচনের বিষয়ে সুরাহার জন্য প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাবেন। তাই মামলা মোকদ্দমা আর আন্দোলনের ভেতর দিয়েই এক অস্হিরতা তৈরি হয়েছে এফডিসিতে।

সকলেই মূলত চলচ্চিত্র শিল্পীদের মুরুব্বিদের একটি পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু সিনিয়র শিল্পীর ভেতরে চিত্রনায়ক ফারুক দীর্ঘদিনের অসুস্হতায় চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর রয়েছেন। সোহেল রানাও করোনা আক্রান্েতর পর থেকে বাসায় অবস্হান করছেন। শাবানা-ববিতা কেউই দেশে নেই বা আগ্রহও নেই! চিত্রনায়ক আলমগীর নির্বাচনের আগেই কাঞ্চন নিপুন প্যানেলে হাজির হয়ে তাদের প্রকাশ্য সমর্থন জানান এবং জায়েদ খানের মিথ্যাচার নিয়ে অভিযোগ তোলেন।

এত নাটকীয়তার ভেতরে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এফডিসিতে মূলত আর সিনেমার কোনো আপডেট নেই। বরং তারকাদের পরস্পর বিরোধীয় অভিযোগের নাটক মঞ্চায়িত হচ্ছে।

চিত্রনায়ক উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি এফডিসিতে নির্বাচনের দিন নির্মাতা প্রযোজকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেবার প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেছিলাম। এটা আমার ব্যক্তিগত প্রতিবাদ ছিল। তবে এখন মূলত সকলে মিলে একটি স্হিতিশীল অবস্হায় আসা প্রয়োজন। নয়ত এই বিশৃঙ্খলা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে তা নিয়ে আমি খুবই শংকিত।’

তাই এই অবস্হায়, এই ঘণীভুত সংকটের সমাধান কে দেবে, তা নিয়েই সবাই এক অন্ধকারে ডুবে আছেন। পাশাপাশি মেইনস্ট্রীম গণমাধ্যমের বাইরে বিভিন্ন ইউটিউব ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে মিথ্যে হেডিংয়ে আরো বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হচ্ছে।