প্রকাশিত: ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে সুপ্রিমকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। দেশটির নির্বাচন ৩ নভেম্বর শেষ হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন আদালতের রায়ের মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকদিন পর। নির্বাচনের রায় আদালত পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন মেনে না নেওয়ার হুমকি এবং নানান মন্তব্য। তার প্রেক্ষিতে দেশটির অধিকাংশ রাজ্যে সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিরোধ শিবির।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ’প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডাকযোগে ভোট প্রদানের বিরোধিতা করে বলেছেন, এই ব্যবস্থায় জালিয়াতি হবে’। সত্যিকার অর্থে এসব বলার মাধ্যমে তিনি নির্বাচনকে বিতর্কিত করার পথ সুগম করে রাখছেন। নির্বাচনী ফলাফল নিজের পক্ষে না হলে রিপাবলিকানরা আইনি লড়াইয়ে নামবে এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। আর এ কারণেই ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্টের শূন্য আসনে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টিকে তারা এতো গুরুত্ব দিচ্ছেন।
নির্বাচনের মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিচারপতি রুথ বেদার গিন্সবার্গের মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির পদ শূন্য হয়। ডেমোক্র্যাটদের দাবি ছিল, নির্বাচন সামনে রেখে এই পদে নিয়োগ স্থগিত রাখা। সিনেটে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তোড়জোড় করে ট্রাম্প মনোনয়ন দিয়েছেন বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেটকে।
নির্বাচনের আগেই এই পদে তার নিয়োগ চূড়ান্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। লক্ষ্য সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের আধিপত্যকে আরও শক্ত করা। এই তৎপরতার বিরুদ্ধে গত শনিবার ওয়াশিংটনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলছেন, আর মাত্র অল্প কয়েক দিন পরেই নির্বাচন। ফলে সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ এই নিয়োগটি নতুন প্রেসিডেন্টের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনিসহ ডেমোক্র্যাট নেতারা জোড়ালোভাবে এই নিয়োগের বিরোধিতা করছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তি, তিনি চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সেই মেয়াদ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ফলে তার মেয়াদে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দেওয়াটাই তার সাংবিধানিক দায়িত্ব। ’আমি দায়িত্ব পালন করছি। সর্বোচ্চ আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কোনো অভিপ্রায় আমার নাই।’
বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেট সিনেট শুনানিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার আগে থেকে কোনো যোগাযোগ হয়নি। যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল আদালত পর্যন্ত যায়, তাহলে তিনি কি সেই বিচার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন? এই প্রশ্নটি অবশ্য এড়িয়ে যান ট্রাম্প মনোনীত এই বিচারপতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুধীন সেন মনে করেন, সিনেটে ৫৩টি আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা। তাই এই নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্বাচনের ফলাফল আদালতে গেলে এ থেকে অবশ্যই সুবিধা পাওয়ার আশা করছেন ট্রাম্প এবং তিনি সেই নিরিখেই কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেটের নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সুপ্রিম কোর্টে ৯ বিচারপতির মধ্যে রক্ষণশীল ও উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত বিচারকদের সংখ্যা হবে ৬ বনাম ৩ জন। যা দীর্ঘ মেয়াদে ডেমোক্র্যাটদের পেছনে ফেলবে। কারণ স্বেচ্ছায় অবসরে না গেলে কিংবা কারো মৃত্যু না হলে কাউকে সেই পদ থেকে সরানো যায় না। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই পদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাউথ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম ও কমিউনিকেশনসের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেটের মেধা ও প্রজ্ঞার বিষয়ে কোনো নাই। তিনি নটর ডাম ইউনিভার্সটিতে পড়াশোনা করা এবং পেশাজীবনে অত্যন্ত মেধাবী। নির্বাচনের একেবারে কাছাকাছি সময়ে এই নিয়োগ না দেওয়াটা এক রাজনৈতিক সভ্য আচরণের উদাহরণ হতে পারতো।
তিনি আরও বলেন, দেশটির সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। নিয়োগ পাওয়ার পর যেহেতু তাদের কারোর মুখাপেক্ষী থাকতে হয় না; তাই তাদের নিজের সুনাম, দেশপ্রেম ও পেশাদারির সঙ্গেই রায় দিবেন বিচারপতিরা এই আশাও করছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাস খানেকের মধ্যে নেল গোরসাচকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে বিচারপতি অ্যান্টোনিন স্কেলিয়ার মৃত্যুতে ওই পদটি শূন্য হয়েছিল। কিন্তু সিনেটে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিচারপতি ম্যারিক গারল্যান্ডকে ওই পদে মনোনয়ন দিয়েও চূড়ান্ত নিয়োগ দিয়ে যেতে পারেননি সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা। পরে ক্ষমতায় এসে সেই সুযোগ কাজে লাগান ট্রাম্প। কেবল তা-ই নয়, নিজের প্রথম মেয়াদেই সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি ব্রেট কাভানাহকেও নিয়োগ দিতে সমর্থ হন ট্রাম্প।
উল্লেখ করা যেতে পারে ২০০০ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ বুশ এবং ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী আল গোরের লড়াই শেষ পর্যন্ত গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেবার ফ্লোরিডায় দুই প্রার্থীর ভোটসংখ্যা খুব কাছাকাছি হওয়ায় রাজ্যটির আইন অনুযায়ী আবারও গণনার প্রয়োজন পড়ে। দেখা যায়, মাত্র ০.০০৯ শতাংশ অর্থাৎ ৫৩৭ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন জর্জ বুশ। এই জটিলতার শেষ হয় আদালতের রায়ে।
৯ সদস্যের সুপ্রিম কোর্টে ৫-৪-এ রায় যায় জর্জ বুশের পক্ষে। ফ্লোরিডার ২৫টি ইলেকটোরাল কলেজ (তখনকার হিসাবে) পেয়ে যান জর্জ বুশ। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে দরকার হয় কমপক্ষে ২৭০টি। ফ্লোরিডার ভোটসহ জর্জ বুশ পেয়েছিলেন মাত্র একটি বেশি ২৭১টি। অন্যদিকে ফ্লোরিডার ভোট ছাড়াই আল গোরের ছিল ২৬৬টি। আর দেশজুড়ে বুশের চেয়ে তিনি পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৩৯৮ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। এরপরও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেবার দেশটির প্রেসিডেন্ট হন জর্জ বুশ।
Editor In Chief : Mynul Hasan
Editor : Poliar Mohammad Wahid
Managing Editor : Muhibur Rahman Raju
CEO : Mahfuzur Rahman Adnan
Phone : 7188237535,
7188237538 (Fax)
Email : voiceofbangladesh.info@gmail.com
JOINTLY PUBLISHED FROM TORONTO, CANADA AND NEW YORK, USA.
A Concern Of Positive International Inc USA.
All Rights Reserved -2019-2021
Design and developed by Positive IT USA