প্রকাশিত: ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২০
কে পাবেন এবার শান্তিতে নোবেল-সেই ঘোষণা হবে আগামী শুক্রবার। তবে সম্ভাব্য নাম ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবার সম্ভাব্য তালিকায় নেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সংঘাত, বিভাজন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মহামারিতে কাটতে থাকা এ বছর নোবেল পুরস্কারকে আশার একটি বিরল মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন অনেকে। ‘এ বছর কে নোবেল পাবেন, এ ব্যাপারে আমি দীর্ঘকাল পর সবচেয়ে কম নিশ্চিত,’ সিএনএনকে বলেন স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ।
বরাবরের মতোই সম্ভাব্য বিজয়ীদের নাম নোবেল কমিটি গোপনীয়তার সঙ্গে আড়ালে রেখেছে। জানা গেছে, প্রার্থী সংখ্যা ৩১৮। যার মধ্যে ব্যক্তি ২১১ ও প্রতিষ্ঠান ১০৭। অবশ্য নানা কারণে সবিশেষ এই বছরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারকে তুলনামূলক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘আমার ধারণা, পুরস্কারটির মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষ বার্তা প্রকাশ করতে চায় তারা (নোবেল কমিটি),’ বলেন স্মিথ। ‘সবচেয়ে বড় কথা, আশাবাদের বার্তা এবং সবকিছু ঠিক বা আরও ভালো হবে- এমন বিশ্বাসের প্রচার ঘটানোর চেষ্টা তাদের থাকে।’
‘কোভিড’ শান্তি পুরস্কার?
ব্যতিক্রমধর্মী অস্থির এ বছরে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার তালিকায় অনেকেই এগিয়ে রাখছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলানোয় ১০ মাস ধরে কাজ করছে সংস্থাটি। অন্যদিকে, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ ও পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।
অবশ্য, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনাও হয়েছে প্রচুর। ‘করোনাভাইরাস সামলাতে ব্যর্থতার দায়ে’ সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; যদিও অনেক বিশ্বনেতাই সংস্থাটির প্রশংসা করেছেন। তবে নোবেল বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জল্পনা-কল্পনা পেরিয়ে এবার হয়তো বিশেষ চমক থাকছে।
এদিকে, অনেকের সমালোচনার শিকার হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক হেনরিক উরডাল। ‘মহামারিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতটুকু দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে পারছে, এ ব্যাপারে নোবেল জুরির এখনো নিশ্চিত নয়,’ বলেন তিনি।
সারা বছর সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে যাদের নাম আলোচনা হয়, অনেক সময়ই নোবেল কমিটি হাঁটে এর উল্টোপথে। এ কারণে কার বা কোন প্রতিষ্ঠানের ভাগ্যে এই স্বীকৃতি জুটবে- ভবিষ্যদ্বাণী করা দুরূহ খুব; তবু উরডালের সংস্থা এরকম একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশের চেষ্টা করে, এবং সেই তালিকা থেকে গত দুই বছরে পাঁচটি নাম সফল হিসেবে প্রমাণ হয়েছে।
এবারের শান্তিতে নোবেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সংগ্রাম মূল্যায়িত হবে বলে আশা করছেন উরডাল। ‘এ এমনই এক বছর, যখন আমরা সাংবাদিকদের জন্য কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লড়াই দিন দিন আরও কঠিন হয়ে পড়া এবং এনজিওগুলোর কাজের পরিবেশ প্রতিকূল হওয়া- উভয় ব্যাপারেই গভীর মনোযোগ দিচ্ছি,’ সিএনএনকে বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ বেড়ে গেছে। অনেক দেশেই সাংবাদিকদের অধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে সরকারগুলো। এর পাশাপাশি মিথ্যে তথ্য ও ভুয়া সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে গণমাধ্যমকে। আর এ কারণে তালিকায় ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’কে (সিপিজে) ওপরে রেখেছেন উরডাল; তবে ‘রিপোর্টারস উইথাউট বর্ডারস’-এর (আরএসএফ) সম্ভাবনাকেও দিচ্ছেন গুরুত্ব। অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে কোনো সাংবাদিকও পুরস্কারটি পেতে পারেন বলে অনুমান তার।
‘সাংবাদিকরা যা করছেন এবং সংঘাতকে চিহ্নিত করতে তাদের যা করার সক্ষমতা রয়েছে- এ দুটির মধ্যে একটি সরাসরি সংযোগ বিদ্যমান,’ বলেন উরডাল।
‘প্রার্থী বৈচিত্র্য’
শান্তিতে প্রথম নোবেল দেওয়া হয় ১৯০১ সালে। পেয়েছিলেন রেড ক্রসের যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ডুনান্ট ও শান্তিবাদী ফ্রেডেরিক প্যাসি। সেই থেকেই বোঝা যায়, জয়ী নির্বাচনে একটা দারুণ রহস্য তৈরি করে রাখে নোবেল কমিটি।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, এ বছর সুদানের বিদ্রোহ গুরুত্ব পাবে। ওই বিদ্রোহে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যূত করা হয়। বিদ্রোহটিতে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ (এফএফসি’) এবং তরুণ আন্দোলনকর্মী আলা সালাহকে নোবেল জয়ে সম্ভাব্য হিসেবে গণ্য করছেন উরডাল।
সংঘাতকে উন্নয়নে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে সুদানের ঘটনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা তার। অবশ্য, ‘আমার আশঙ্কা, নতুন বেসামরিক সরকার তুলনামূলক দুর্বল। তাই ওখানকার পরিস্থিতি যথেষ্ট ভঙুর,’ যোগ করেন তিনি।
আলেক্সেই নাভালনি
অন্যদিকে, রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা এবং আগস্টে মারাত্মক বিষক্রিয়ার শিকার হওয়া আলেক্সেই নাভালনিকেও সম্ভাব্য জয়ী ভাবা হচ্ছে।
উরডাল বলেন, ‘বিষ প্রয়োগের শিকার হওয়ার আগে থেকেই নাভালনি আমাদের তালিকায় রয়েছেন। রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তাকে পুরস্কারটির জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।’
এদিকে, স্মিথের বিশ্বাস, এ বছর সম্ভবত কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে পুরস্কৃত করা হবে। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দিতে নারাজ।
গ্রেটা থুনবার্গ
সুইডিশ কিশোরী পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গত বছরই পুরস্কারটির সম্ভাব্য জয়ী হিসেবে ভাবা হয়েছিল। তবে পরিবেশবাদী কারও শান্তিতে নোবেল পাওয়া উচিত কি না, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও কম নয়।
উরডাল অবশ্য বলেছেন, থুনবার্গকে নোবেল পেতে দেখলে তিনি বরং অবাক হবেন।
‘পরিবেশকে সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হিসেবে গণ্য করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন তিনি। ‘তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে কোনো সংযোগ বিদ্যমান কি না- এ ব্যাপারে আমার প্রশ্ন রয়েছে।’
অন্যদিকে, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সংযোগ থাকার গুরুত্ব নিয়ে যাদের সন্দেহ, আমি তাদের দলের নই। আমার ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তার মধ্যে সংযোগের প্রমাণ পরিষ্কার,’ বলেন স্মিথ।
জাসিন্ডা আরডার্ন
সম্ভাব্য নোবেলজয়ী হিসেবে নিউজিল্যান্ডের নেত্রী জাসিন্ডা আরডার্নের নাম আগেও আলোচনা হয়েছে। তার দেশ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যথেষ্ট সাফল্য দেখানোয় সেই সম্ভাবনা এবারও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে বড় বড় আন্তর্জাতিক চুক্তি মধ্যস্থতায় তার সম্পৃক্ততার ঘাটতি এ ক্ষেত্রে এ ক্যাটাগরিতে নোবেলজয়ী বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতা থেকে তাকে পিছিয়ে রেখেছে।
বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ওয়াশিংটন ডিসির এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিতে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে সেই সম্ভাবনাকে পাত্তা দিতে নারাজ অনেক বিশেষজ্ঞ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
‘মনোনয়ন পাওয়া আর পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হওয়া এক জিনিস নয়,’ বলেন উরডাল। তার মতে, যে কেউই মনোনয়ন পেতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টমাত্রই মনোনয়ন পাওয়া নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা।
অন্যদিকে, স্মিথ বলেন, ‘নিশ্চিত করে বলতে পারি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্ভাবনা নেই।’ আগামী শুক্রবার এ বছর শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল ইনস্টিটিউট। তখনই জানা যাবে- শেষ হাসি কার মুখে!
Editor In Chief : Mynul Hasan
Editor : Poliar Mohammad Wahid
Managing Editor : Muhibur Rahman Raju
CEO : Mahfuzur Rahman Adnan
Phone : 7188237535,
7188237538 (Fax)
Email : voiceofbangladesh.info@gmail.com
JOINTLY PUBLISHED FROM TORONTO, CANADA AND NEW YORK, USA.
A Concern Of Positive International Inc USA.
All Rights Reserved -2019-2021
Design and developed by Positive IT USA