প্রকাশিত: ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২০
নিউইয়র্ক : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্তের (সি আর দত্ত) মরদেহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে পৌঁছাবে সোমবার সকালে।
তার কনিষ্ঠ জামাতা প্রদীপ দাসগুপ্ত জানান, ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় তার শ্বশুরের কফিন নিয়ে ‘এমিরেটস স্কাই কার্গো’দুবাইয়ের পথে রওনা হয়।
কানাডার টরন্টো থেকে দুবাই গিয়ে সি আর দত্তের শেষযাত্রার সঙ্গী হবেন তার মেজ মেয়ে ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত। তারা ঢাকায় পৌঁছাবেন সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার পর।
এদিকে সি আর দত্তের ছেলে ডা. চিরঞ্জিব দত্ত রাজা, বড় মেয়ে মহুয়া দত্ত এবং ছোট মেয়ে কবিতা দাসগুপ্ত হ্যাপি শনিবার রাতে নিউ ইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারলাইন্সে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। রোববার রাত আড়াইটায় তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা।
ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ অগাস্ট রাতে মারা জান সি আর দত্ত।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বীর উত্তম খেতাবধারী এই মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
প্রদীপ দাসগুপ্ত বলেন, “করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে টিকিট সংগ্রহ এবং কফিন বহনের ব্যবস্থা করতে গিয়েই মরদেহ দেশে পাঠাতে কদিন বিলম্ব ঘটল।”
পারিবারিক বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সি আর দত্তের মরদেহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হচ্ছে না। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সম্মিলিক সামরিক হাসপাতালে।
মঙ্গলবার সকাল ৭টায় কফিন নিয়ে যাওয়া হবে বনানী ডিওএইচএসে সি আর দত্তের বাসায়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
বাসা থেকে সি আর দত্তের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
সি আর দত্তের মরদেহ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে থাকবে বেলা ১১টা পর্যন্ত। তারপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সবুজবাগের রাজারবাগ শ্মশানে।
জীবন কানাই দাস বলেন, “সবুজবাগেই তার শেষকৃত্য হবে। হবিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে উনার মরদেহ নেওয়া হচ্ছে না, এটাই কনফার্ম।”
স্ত্রী বিয়োগের পর গত এক দশক ধরে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কেই থাকছিলেন সি আর দত্ত। গত বছরের শেষ দিকে তিনি ফ্লোরিডায় ছোট মেয়ে কবিতার বাসায় যান। মার্চে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লে তিনি আর নিউ ইয়র্কে ফেরেননি।
২০ অগাস্ট বাথরুমে পড়ে গিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙে যায় সি আর দত্তের; হাসপাতালে নেওয়ার পর পায়ে অস্ত্রোপচারও করা হয়।
কিন্তু সার্জারির পর তার মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং কিডনিও অচল হয়ে পড়ে। ২৪ অগাস্ট রাতে হাসপাতালেই মারা যান তিনি।
১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের রাজধানী শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন সি আর দত্ত। বাবা উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরে তারা স্থায়ীভাবে চলে আসেন হবিগঞ্জে।
১৯৫১ সালে তখনকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চার বছরের মাথায় পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে আসালংয়ে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন সি আর দত্ত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত মুহূর্ত যখন উপস্থিত, সে সময় ছুটিতে দেশেই ছিলেন সি আর দত্ত। তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের মেজর।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত সি আর দত্ত মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তাকে দেওয়া হয় ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব।
সিলেট অঞ্চলে ওই সেক্টরে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যার বেশ কয়েকটিতে নিজেই নেতৃত্ব দেন সি আর দত্ত।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদানের জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহা পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন সি আর দত্ত। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Editor In Chief : Mynul Hasan
Editor : Poliar Mohammad Wahid
Managing Editor : Muhibur Rahman Raju
CEO : Mahfuzur Rahman Adnan
Phone : 7188237535,
7188237538 (Fax)
Email : voiceofbangladesh.info@gmail.com
JOINTLY PUBLISHED FROM TORONTO, CANADA AND NEW YORK, USA.
A Concern Of Positive International Inc USA.
All Rights Reserved -2019-2021
Design and developed by Positive IT USA